Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

জাতীয় ইঁদুর নিধন অভিযান ২০২১

জাতীয় ইঁদুর নিধন অভিযান ২০২১
ড. মোঃ আবু সাইদ মিঞা

বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। এ দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি কৃষি। আমাদের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৮০ ভাগ কৃষিতে নিয়োজিত। গ্রামের উন্নয়নের কথা বলতে গেলে প্রথমে আসে কৃষি উন্নয়ন। পাশাপাশি কৃষিভিত্তিক শিল্প, বাণিজ্য ও সেবা খাতের উন্নয়ন। দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং জমি হ্রাসের প্রেক্ষাপটে মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা বিধানের জন্য এবং কৃষি ও কৃষকের ভাগ্য উন্নয়নের লক্ষ্যে বর্তমান কৃষক ও কৃষিবান্ধব সরকার গ্রহণ করেছে বেশ কিছু  যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এর ফলে  দেশ আজ দানাজাতীয় শস্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। সে সাথে খাদ্যশস্য রপ্তানিও করা হচ্ছে। ‘এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে’ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী কৃষির সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রচেষ্টায় শস্যের নিবিড়তা বেড়েই চলেছে বিধায় জমিতে প্রায় সবসময় ফসল বিদ্যমান থাকে। এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে প্রয়োজন কৃষি উৎপাদনে আধুনিক কলাকৌশল প্রয়োগ করে নিরাপদ ও পুষ্টিসমৃদ্ধ অধিক ফলন নিশ্চিত করা আর উৎপাদিত কৃষি পণ্যের বালাইজনিত ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস করা। বীজ বপন থেকে শুরু করে ফসল ঘরে তোলা পর্যন্ত বিভিন্ন রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ এবং ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের প্রাদুর্ভাব পরিলক্ষিত হয়। এ সমস্ত প্রতিবন্ধকতা এড়িয়ে ফসল ঘরে তোলাই কৃষকের একমাত্র লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু দেখা যায় কৃষকের উৎপাদিত ফসলের একটা বড় অংশ ইঁদুর দ্বারা নষ্ট হয়। ইঁদুর যে পরিমাণ খাবার খায় তার চেয়ে বেশি কেটেকুটে নষ্ট করে। এক জোড়া ইঁদুর গর্তে ২০ কেজির বেশি খাদ্য জমা করে, ৫০ কেজি গোলাজাত শস্য নষ্ট করে। ইঁদুর মাঠ থেকে শুরু করে ফসল কর্তনের পরেও গুদামজাত অবস্থায় বা গোলায় তোলার পরও ক্ষতি করে। সুতরাং ইঁদুর সর্বাবস্থায় আমাদের ক্ষতি করতে সক্ষম। ইঁদুরের বিচরণ ক্ষেত্র বাড়ির শোবার ঘর পর্যন্ত বিস্তৃত। এরা মাঠের ফসল, গুদামজাত শস্য, ফল, শাকসবজি, সংরক্ষিত বীজ ছাড়াও আমাদের বাসাবাড়ির আসবাবপত্র, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, কাপড়-চোপড়, বিছানাপত্র, কাগজ, লেপ-তোষক ইত্যাদি কাটাকুটি করে আমাদের প্রচুর ক্ষতি করে। এর পাশাপাশি বাঁধ, রেললাইন, জাহাজ, বন্দর, অফিস, মাতৃসদন, সেচের নালাসহ সর্বত্র ইঁদুরের বিচরণ রয়েছে। এরা মানুষ ও পশুপাখির মধ্যে প্লেগ, জন্ডিস, টাইফয়েড, চর্মরোগ, আমাশয়, জ্বর, কৃমিসহ প্রায় ৬০ প্রকার রোগজীবাণুর বাহক ও বিস্তারকারী। বাংলাদেশে ইঁদুরের আক্রমণে বছরে আমন ধানের শতকরা ৫-৭ ভাগ, গম ৪-১২ ভাগ, গোলআলু ৫-৭ ভাগ, আনারস ৬-৯ ভাগ নষ্ট করে। গড়ে মাঠ ফসলের ৫-৭% এবং গুদামজাত শস্য ৩-৫% ক্ষতি করে। ইঁদুর বছরে প্রায় ৭ লক্ষ মে.টন খাদ্যশস্য নষ্ট করে।


ইঁদুর স্তন্যপায়ী, সর্বভুক ও নিশাচর প্রাণী। ফসলের জন্য ক্ষতিকর স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে ইঁদুর মানুষের প্রধান শত্রু। বাংলাদেশে প্রায় ১১ প্রজাতির ইঁদুর আছে। ইঁদুরের সামনের দাঁত জন্ম থেকে বাড়তে থাকে। ছেদন দন্তের বৃদ্ধি রোধ করার জন্যে এরা কাটাকাটি করে। ইঁদুর বছরে ৬-৮ বার এবং প্রত্যেক বার ৩-১৩টি বাচ্চা জন্ম দেয়। বাচ্চা জন্ম দেয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ইঁদুর পুনরায় গর্ভধারণ করতে পারে। জন্ম গ্রহণের পর তিন মাস বয়সে গর্ভধারণ করতে পারে। একজোড়া ইঁদুর বছরে প্রায় ২০০০টি বংশধর সৃষ্টি করতে পারে।


ইঁদুরের বিভিন্ন প্রজাতি : মাঠের বড় কালো ইঁদুর, মাঠের কালো ইঁদুর, বাঁশের ইঁদুর, গেছো ইঁদুুর, হিমালয়ান ইঁদুুর, ঘরের বাত্তি ইঁদুুর, মাঠের ছোট নেংটি ইঁদুুর, সাদা দাঁত বিশিষ্ট ইঁদুুর। ইঁদুরের সমস্যা গ্রামের লোকজন সঠিকভাবে বুঝতে পারে না, সমস্যা সমাধানের জন্য স্থানীয় কোন পদ্ধতিও পর্যাপ্ত নয়। গ্রামীণ মানুষের জীবন ও জীবিকার উপর ইঁদুর যে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে তা সঠিকভাবে বুঝে উপযুক্ত দমন ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করতে পারাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।


এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ১৯৮৩ সাল থেকে ইঁদুর নিধন অভিযান পরিচালনা করে আসছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্তৃক গত ৫ বছরে ইঁদুর নিধন অভিযান কর্মসূচি বাস্তবায়নের ফলে ইঁদুরের আক্রমণ থেকে রক্ষাকৃত আমন ফসলের পরিমাণ সারণি দ্রষ্টব্য।


বর্তমানে সারাবিশ্বে পোলট্রি শিল্প ইঁদুর দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে এবং পোলট্রি উৎপাদনকারীদের অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে। ইঁদুর মুরগির খামারে গর্ত করে মুরগির ডিম ও ছোট বাচ্চা খেয়ে ফেলে। পোলট্রি শিল্পে ইঁদুর দ্বারা অর্থনৈতিক ক্ষতির দিকে লক্ষ্য রেখে খামারিদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে যাতে সমন্বিতভাবে ইঁদুর দমনে অংশগ্রহণ করে এবং খাদ্য ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

 

সারণি : ইঁদুর নিধন অভিযান কর্মসূচি বাস্তবায়নের ফলাফল॥

বছর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ছাত্রছাত্রী ও স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা/কর্মচারীর সংখ্যা নিধনকৃত ইঁদুরের সংখ্যা ইঁদুরের আক্রমণ থেকে রক্ষাকৃত আমন ফসলের পরিমাণ  (মে. টন)
২০১৬ ৬০,২৬,৬৯১ ১,১৮,৪৫,৯০৪ ৮৮,৮৪৪
২০১৭ ৬৪,০০,০১২ ১,২০,৫১,৪১৬ ৯০,৩৮৫
২০১৮ ৫৬,৮৩,৩৬৫ ১,৬৬,৮৭,২৩৪ ১,২৫,১৫৪
২০১৯ ৫৫,১৩,৪৪৫ ১,৪৭,৮৯,৭৮৫ ১,১০,৯২৩
২০২০ ৩১,৪৮,৪৮৫ ১,১৯,৩৪,৪৬৩ ৮৯,৫০৮


ইঁদুুর নিধন অভিযান ২০২১ এর উদ্দেশ্য
ইঁদুর খুব চালাক প্রাণী। ইঁদুরের শ্রবণ ও ঘ্রাণ শক্তি অত্যন্ত প্রকট। ইঁদুর ব্যবস্থাপনা একার পক্ষে সম্ভব নয়। সকলের সমন্বয়ে সমন্বিতভাবে দমন ব্যবস্থা করতে হবে। ইঁদুর নিধন অভিযান ২০২১ উদ্যাপনের উদ্দেশ্যসমূহ হচ্ছে (১) কৃষক-কৃষানি, ছাত্রছাত্রী, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, আইপিএম/আইসিএম এসব ক্লাবের সদস্য, সিআইজি, ডিএই এর বিভিন্ন কৃষক দল, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলোসহ সর্বস্তরের জনগণকে ইঁদুর দমনে উদ্বুদ্ধ করা; (২) ইঁদুর দমনের জৈবিক ব্যবস্থাপনাসহ লাগসই প্রযুক্তি কৃষি কর্মীদের মাধ্যমে কৃষকের দোরগোড়ায় পৌঁছানো; (৩) ঘরবাড়ি, দোকানপাট, শিল্পকারখানা ও হাঁস-মুরগির খামার ইঁদুরমুক্ত রাখার জন্য সর্বস্তরের জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা; (৪) আমন ফসল ও অন্যান্য মাঠ ফসলে ইঁদুরের ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে রাখা; (৫) গভীর ও অগভীর নলকূপের সেচের নালার ইঁদুর মেরে পানির অপচয় রোধ করা; (৬) রাস্তাঘাট ও বাঁধের ইঁদুর নিধনের জন্য সর্বস্তরের জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা; (৭) ইঁদুরবাহিত রোগের বিস্তার রোধ করা এবং পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখা; (৮) সম্ভাব্য ক্ষেত্রে গণযোগাযোগ বিশেষ করে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারের ব্যাপারে জোর দেয়া।


ইঁদুঁর নিধন অভিযান ২০২১ এর উদ্বোধন এবং পুরস্কার প্রদান
জাতীয় পর্যায়ে ইঁদুর নিধন অভিযানের উদ্বোধন অক্টোবর মাসের প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহে পরিচালিত হতে যাচ্ছে। এবারের প্রতিপাদ্য ‘জাতীয় সম্পদ রক্ষার্থে, ইঁদুর মারি একসাথে।’ বর্তমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে অঞ্চল, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আনুষ্ঠানিকতার ব্যাপারে এবং ইঁদুর নিধনে পুরস্কার প্রদান সম্পর্কে পরবর্তী নির্দেশনা মোতাবেক অনুসরণ করা হবে। জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য পোস্টার, লিফলেট, পুস্তিকা  প্রস্তুত করে অঞ্চল, জেলা ও উপজেলায় প্রেরণ করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।


ইঁদুর একটি নীরব ধ্বংসকারী স্তন্যপায়ী প্রাণী। ইঁদুর প্রাণীটি ছোট হলেও ক্ষতির ব্যাপকতা অনেক। এরা যে কোনো খাদ্য খেয়ে বাঁচতে পারে। যে কোনো পরিবেশে মানিয়ে নিতে পারে। অল্প বয়সে বাচ্চা দিতে পারে। ইঁদুর একটি অত্যন্ত ক্ষতিকর প্রাণী। একটি মাত্র পদ্ধতি দ্বারা ইঁদুর দমন করা বাস্তবে সম্ভব নয়। ইঁদুর দমন পদ্ধতি সঠিক স্থানে, সঠিক সময়ে ও সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে হবে। ইঁদুর মারা বিষ খুবই মারাত্মক। বিষ প্রয়োগের সময় পানাহার বা ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে। কাজের শেষে হাত মুখ এবং শরীরের অনাবৃত অংশ ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে। মানুষ বা পশু খাদ্যের সাথে ইঁদুরের বিষ পরিবহন বা গুদামজাত করা এবং বিষের খালি প্যাকেট অন্য কাজে ব্যবহার করা যাবে না। বাংলাদেশের কৃষকগণ ১০-১২ ধরনের ফাঁদ ব্যবহার করে ইঁদুর ধরে থাকেন। যেমন- বাঁশের তৈরি ফাঁদ, কাঠের তৈরি ফাঁদ, ইঁদুর ধরার লোহার তৈরি কল ইত্যাদি। এ ছাড়া বাসাবাড়িতে ইঁদুর ধরার জন্য গ্লুবোর্ড ব্যবহার করে ছোট বড় ৫-১০টি ইঁদুর মারা যায়। জুম ফসল রক্ষার জন্য বাঁশের বেড়া দিয়ে বাঁশের ফাঁদ পাতা হয়। দক্ষিণ অঞ্চলে জোয়ারের সময় টেঁটা দিয়ে ইঁদুর মারা যায়। জোয়ারে ধান ফসল ডুবে গেলে ইঁদুর কচুরিপানা, হোগলা গাছে ও মাঠে আশ্রয় নিলে তখন সম্মিলিতভাবে ইঁদুর দমন করা উচিত। ইঁদুর মারার প্রকৃত বিষ হচ্ছে জিংক ফসফাইড। কৃষক এ বিষ বিভিন্ন খাদ্যের সাথে মিশিয়ে বিষটোপ তৈরি করেন। খাদ্য হিসেবে শুঁটকি, চিংড়ি, শামুক, কাঁকড়া ভালো কাজ করে। বাজারে ল্যানির‌্যাট ও ব্রমাপয়েন্ট পাওয়া যায়, যা ভালো কাজ করে। ৩ গ্রাম ওজনের অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইডের গ্যাসবড়ি ইঁদুরের গর্তে দিয়ে ভালোভাবেই ইঁদুর দমন করা যায়। নিজের বাড়ির ইঁদুর নিজেকেই মারতে হবে এটি বাস্তব কথা কিন্তু একা ইঁদুর দমন করা সম্ভব নয়। ইঁদুর সমস্যা একটি সামাজিক সমস্যা। সমাজের সবার সহযোগিতা ছাড়া ইঁদুর দমন সম্ভব নয়। ইঁদুর দমন প্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও উপকরণ দিয়ে সহায়তা ও ইঁদুর দমন কর্মসূচির জন্য দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা প্রয়োজন।


পরিচালক, উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইং, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ি, ঢাকা। ফোন : ৯১৩১২৯৫, ই-মেইল: dppw@dae.gov.bd

 

 


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon